উইন্ডোজ টেন এর সিক্রেট টিপস

উইন্ডোজ টেন এর সিক্রেট অনেক টিপস আছে যেগুলো আমরা সাধারণত অনেকেই ব্যবহার করি না বা জানি না। কিন্তু এই ছোটখাটো টিপসগুলো জানা থাকলে আমাদের অনেক কাজ সহজ হয়ে যায়। এবং অনেক ক্ষেত্রেই আমরা আমাদের উইন্ডোজ ডেটাকে সিকিউর রাখতে পারি। চলুন দেখে নেয়া যাক  কিছু উইন্ডোজ টেন এর সিক্রেট টিপস।

উইন্ডোজ টেন এর সিক্রেট টিপস
উইন্ডোজ টেন এর সিক্রেট টিপস

উইন্ডোজ টেন এর সিক্রেট টিপস-১

পিসিতে বিশেষ ওয়েবসাইট ব্লক করুন

আমাদের পিসি তে অনেক সময় ওয়েবসাইট ব্লক করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। মনে করুন, আপনি চাচ্ছেন আপনার পিসিতে বা আপনার অফিসের পিসিতে কেউ যেন ফেসবুক, ইউটিউব বা অন্যান্য আজেবাজে সাইটে যেন প্রবেশ করতে না পারে। সেজন্য আপনি কোন থার্ডপার্টি সফটওয়্যার ছাড়াই নির্দিষ্ট কোন সাইট কে ব্লক করে রাখতে পারেন। আবার চাইলে আনব্লক করে রাখতে পারেন। বিশেষ ওয়েবসাইট ব্লক করার জন্য নিম্মির ধাপগুলো অনুসরণ করুন।

Step-1

উইন্ডোজের সার্চ বক্সে টাইপ করুন C:\Windows\System32\drivers\etc এবং কিবোর্ড থেকে এন্টার বাটনে চাপ দিন।

 Step-2

এখান থেকে  hosts.txt  এই ফাইলটিকে মাউসের রাইট বাটন ক্লিক করে নোটপ্যাড এ ওপেন করুন।

Step-3

এখন ফাইলটির সবার শেষের দিকে এসে এই দুটি লাইন লিখে ফাইলটি সেভ করুন.

  • 127.0.0.1      www.websitename.com
  • 127.0.0.1      websitename.com

এখানে websitename এর জায়গায় আপনি যে সাইট ব্লক করতে চাচ্ছেন সেই সাইটের নাম দিবেন। এভাবে আপনি যত খুশি সাইট ব্লক করতে পারবেন । আবার যদি আপনি সাইট গুলোকে আনব্লক করতে চান, তাহলে ওই লাইনগুলো ডিলিট করে সেভ করে নিলেই হবে।

উইন্ডোজ টেন এর সিক্রেট টিপস-২

কিভাবে পিসিতে ইউএসবি পোর্ট অকার্যকর করে রাখা যায়

আপনার উইন্ডোজ পিসিতে ইউএসবি পোর্টকে অক্ষম করুন, যাতে কেউ ডেটা চুরি করতে না পারে। আপনি চাইলে আপনার ইউএসবি পোর্ট গুলোকে যখন ইচ্ছা তখন কার্যকর অথবা অকার্যকর করে রাখতে পারেন। এই কাজটি করার জন্য নিচের স্টেপ গুলো ফলো করুন।

Step-1

উইন্ডোজের সার্চ বক্সে টাইপ করুন regedit এবং কিবোর্ড থেকে এন্টার বাটনে চাপ দিন। এখন আপনার সামনে উইন্ডোজ এর রেজিস্ট্রি উইন্ডোটি ওপেন হবে

Step-2

  • HKEY_LOCAL_MACHINE এই ফোল্ডারটিকে সম্প্রসারণ করুন। 
  • SYSTEM এই ফোল্ডারটিকে সম্প্রসারণ করুন। 
  • CurrentControlSet এই ফোল্ডারটিকে সম্প্রসারণ করুন।
  • Services এই ফোল্ডারটিকে সম্প্রসারণ করুন।
  • USBSTOR এই ফোল্ডারটিকে এবার ক্লিক করুন।

(HKEY_LOCAL_MACHINE/SYSTEM/CurrentControlSet /Services/USBSTOR)

Step-3

এখন ডান পাশ থেকে Start নামক ফাইলটি ডাবল ক্লিক করুন। এখানে value data তে 4 করে দিন। OKক্লিক করুন।

এখন আপনার উইন্ডোজ থেকে ইউএসবি পোর্ট অকার্যকর  বা ডিজেবল হয়ে যাবে। এদিকে আবার এনাবল বা কার্যকর করতে চাইলে  value data তে 3 করে দিন।

উইন্ডোজ টেন এর সিক্রেট টিপস-৩

উইন্ডোজকে অটোমেটিক শাটডাউন করুন

নির্দিষ্ট সময়ের পর উইন্ডোজকে অটোমেটিক শাটডাউন করুন। মনে করুন আপনি রাতের বেলায় বিছানায় শুয়ে শুয়ে মুভি দেখছেন। এখন আপনি মুভি দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ছেন তা তো আর বলা যায় না। আবার ঘুমের ঘোরে আলসেমি করে উঠে উইন্ডোজকে অফ করতে চাচ্ছেন না। অথবা আপনি চাচ্ছেন আপনার কম্পিউটারটি একটি নির্দিষ্ট সময় পর অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যাক । তো এই কাজটি খুব সহজেই করা যায়।

  • windows key + r চেপে run ডায়লগ বক্সটি ওপেন করুন। এবং টাইপ করুন
  • shutdown –s –t 12000

এখানে 12000 সেকেন্ড বোঝানো হয়েছে । তাই আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী সময় সেকেন্ডে হিসাব করে নিবেন।

উইন্ডোজ টেন এর সিক্রেট টিপস-৪

উইন্ডোজ এর কন্ট্রোল প্যানেল এবং সেটিংসে অ্যাক্সেস সীমাবদ্ধ করুন 

আমাদের অনেক সময়  উইন্ডোজের কন্ট্রোল প্যানেল এবং সিস্টেম সেটিংস এর এক্সেস সীমাবদ্ধ করার প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে স্কুল ,কলেজ, অফিস এবং  ঘরে যদি একাধিক ব্যবহারকারী থাকে এসব ক্ষেত্রে  উইন্ডোজ এর সেটিংস সুরক্ষিত রাখা অত্যন্ত জরুরী।

  • windows key + r চেপে run ডায়লগ বক্সটি ওপেন করুন। এবং টাইপ করুন
  • gpedit.msc

এখান থেকে User Configuration এরপর Administrative Templates এরপর  Control Panel এ ক্লিক করুন। এবার ডান পাশ থেকে Prohibit access to Control Panel and PC Settings এ ডাবল ক্লিক করুন।

এখন এখান থেকে Enable রেডিও বাটনে ক্লিক করুন তারপর Apply এবং সবশেষে OK বাটনে ক্লিক করুন।

উইন্ডোজ টেন এর সিক্রেট টিপস-৫

সফটওয়্যার ইনস্টলেশন বন্ধ করুন

আপনি যদি চান আপনার সিস্টেমে আপনি ছাড়া অন্য কেউ যাতে কোন সফটওয়্যার ইন্সটল করতে না পারে তা আপনি খুব সহজেই করতে পারবেন। কম্পিউটার ব্যবহারকারী যখন একাধিক হয় তখন অনেকেই বিভিন্ন প্রয়োজনে সফটওয়্যার ইন্সটল করে থাকে। দেখা যায় ছোট ভাই বোনেরা না বুঝি ইন্টারনেট থেকে অনেক অ্যাপস ডাউনলোড করে ইন্সটল করে ফেলে। যেগুলোর বেশিরভাগই ম্যালওয়ার অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।তাই এই টিপসটি জানলে আপনি আপনার সিস্টেমকে অযাচিত সফটওয়্যার ইনস্টলেশন হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারবেন। 

  • windows key + r চেপে run ডায়লগ বক্সটি ওপেন করুন। এবং টাইপ করুন
  • gpedit.msc

4 নম্বর টিপসের মত ধাপগুলো অনুসরণ করুন 

Computer Configuration > Administrative Templates > Windows Components > Windows Installer > এবার ডান পাশ থেকে Turn off Windows Installer এ ডাবল ক্লিক করুন।

এখন এখান থেকে Enable রেডিও বাটনে ক্লিক করুন তারপর Apply এবং সবশেষে OK বাটনে ক্লিক করুন।  মাইক্রোসফটের কন্ট্রোল প্যানেল আইটেমের প্রচলিত নাম গুলো দেখে নিন।

উইন্ডোজ টেন এর সিক্রেট টিপস-৬

উইন্ডোজ এর Notifications and Tips বন্ধ করুন 

আপনার  সিস্টেম যদি লো কনফিগারেশনের হয়ে থাকে তাহলে উইন্ডোজের নোটিফিকেশন এন্ড টিপস অপশনটি বন্ধ করে দিন । এতে করে আপনার সিস্টেম  এর পারফরম্যান্স বাড়বে। 

  • windows key + i একসাথে প্রেস করুন,
  • System এ ক্লিক করুন
  • Notifications & Actions  এ ক্লিক করুন
  • এবার ডানে Get tips, tricks, and suggestions as you use Windows এখানে চেকবক্সটি থেকে টিক চিহ্ন উঠিয়ে দিন 

উইন্ডোজ টেন এর সিক্রেট টিপস-৭

উইন্ডোজের রেজিস্ট্রি ক্লিন করুন

উইন্ডোজ রেজিস্ট্রিতে উইন্ডোজ এবং অন্যান্য প্রোগ্রামগুলির জন্য সমস্ত সেটিংস রয়েছে। সফ্টওয়্যার ইনস্টল করার সময়, এই রেজিস্ট্রি পরিবর্তন হয়। কিন্তু আমরা যখন কোন প্রোগ্রাম আনইনস্টল করে দিই তখন এই রেজিস্ট্রি থেকে অনেক সময় ওই প্রোগ্রামের রেজিস্ট্রি ফাইলগুলো ডিলিট হয় না । এরকম ডিলিট না হওয়া ফাইল গুলোর কারণে সিস্টেম এর কার্যকারিতা  কমে যায়। তাই কোন প্রোগ্রাম আনইনস্টল করলে উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি টা চেক করা দরকার পড়ে যে ওই প্রোগ্রামের কোন ফাইল এখনও রয়ে গিয়েছে কিনা। আপনি যদি একটু এডভান্স ইউজার হয়ে থাকেন তাহলে উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি তে গিয়ে ওই ফাইল গুলো খুজে বের করে ডিলিট করে দিতে পারেন।

  • windows key + r চেপে run ডায়লগ বক্সটি ওপেন করুন। এবং টাইপ করুন
  • regedit

তবে আমার মতামত হল ভাল ভাবে না জেনে ম্যানুয়ালি উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি এডিট না করা । কিভাবে উইন্ডোজ ১০ এর রেজিস্ট্রি ক্লিন করতে হয় ফ্রী রেজিস্ট্রি ক্লিনার দিয়ে এই আর্টিকেলটি পড়ুন। 

উইন্ডোজ টেন এর সিক্রেট টিপস-৮

উইন্ডোজ টেন এর প্রয়োজনীয় সিক্রেট টুলস 

উইন্ডোজ টেন এর প্রয়োজনীয় সিক্রেট টুলস গুলোর শর্টকাট আমাদের জানা থাকা দরকার।  কম্পিউটারের আমাদের দৈনন্দিন কাজের গতিশীলতা বাড়াতে এই টুলস গুলো খুব সহায়তা করে।তাই আমি এখানে কিছু প্রয়োজনীয় টুলস এর শর্টকাট দিয়েছি। 

  • netplwiz :  ইউজার একাউন্ট এর অ্যাডভান্স সেটিং অপশন
  • lusrmgr.msc : লোকাল ইউজার এবং গ্রুপ ম্যানেজার সেটিং অপশন 
  • wuapp : উইন্ডোজ আপডেট চেক, ম্যানেজ এবং উইন্ডোজ আপডেট এর যাবতীয় সেটিং
  • appwiz.cpl : এটি হচ্ছে উইন্ডোজের Programs and Features যেখান থেকে আপনি ইনস্টল করা অ্যাপস গুলো আনইন্সটল করতে পারবেন
  • devmgmt.msc : এটি হচ্ছে Windows Device Manager। এখান থেকে সিস্টেমের যাবতীয় হার্ডওয়ার ডিভাইস গুলোকে ম্যানেজ করতে পারবেন।
  • mrt : এই টুলটি দিয়ে আপনার কম্পিউটারের malicious software গুলোকে ক্লিন করতে পারবেন।
  • ncpa.cpl : এটি দিয়ে আপনি সরাসরি আপনার নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টার অ্যাক্সেস করতে পারবেন।
  • Reliability Monitor : এই একটি টুল দিয়ে আপনার পিসি প্রবলেম হিস্টরি গুলো দেখতে পারবেন। 
  • Resource Monitor : এটি দ্বারা সিস্টেমের পারফরম্যান্স দেখা যায়। সিস্টেমের বর্তমান প্রসেস,  সিপিইউ পারফরম্যান্স,  নেটওয়ার্ক পারফরম্যান্স  ইত্যাদি একসাথে দেখা যায়
  • powercfg.cpl : সরাসরি কন্ট্রোল প্যানেলের পাওয়ার অপশন উইন্ডোটি ওপেন করা যায়।
  • firewall.cpl : উইন্ডোজের ফায়ারওয়াল সেটিংস অপশন।
  • sysdm.cpl : এটি দিয়ে সিস্টেমের প্রপার্টি উইন্ডো ওপেন হবে।
  • gpedit.msc : গ্রুপ পলিসি এডিট করার জন্য। 

শেষ কথা

আশা করি উইন্ডোজ টেন এর সিক্রেট টিপস গুলো সঠিকভাবে প্রয়োগ এর মাধ্যমে আপনার দৈনন্দিন কাজগুলো অনেক সহজ হয়ে যাবে। আর এই গুলো ব্যবহার করে আপনি একজন সাধারণ ব্যবহারকারী থেকে নিজেকে অনেক এডভান্স করে নিতে পারবেন। ধন্যবাদ।




Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url