ব্লগিং কি? ব্লগিং করে অনলাইন ইনকাম

অনলাইন থেকে ইনকাম করার একটি চমৎকার পন্থা হলো ব্লগিং (Blogging)। দিন দিন এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এর মাধ্যমে অনেকেই ভালো পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে। যেকোনো পেশার মানুষ তাদের কাজের পাশাপাশি ব্লগিং কে প্যাসিভ ইনকাম হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।

ব্লগিং কি ব্লগিং করে অনলাইন ইনকাম

এখন প্রশ্ন হলো ব্লগিং কি অথবা ব্লগার কি এবং কিভাবে ব্লগিং করে অনলাইন থেকে টাকা ইনকাম করা যায়। আজকের এই আর্টিকেলে ব্লগিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

ব্লগিং কি?

ব্লগিং এর ব্লগ(Blog) একটি ইংরেজি শব্দ। এই শব্দের অর্থ হলো ইন্টারনেটে ব্যক্তিগত দিনলিপি। এই শব্দটি আবার এসেছে "Weblog" থেকে যা ১৯৯৭ সালে জেম বার্গার নামক এক মার্কিন সর্বপ্রথম উদ্ভাবন করেন। এর পর পিটার মেরহোলজ এই "Weblog" কে Web এবং Blog এই দুইভাগে ভাগ করেন। এভাবেই ব্লগ শব্দটি সাড়া পেতে শুরু করে।

ব্লগ তৈরি করার প্রক্রিয়াকেই বলা হয় ব্লগিং। ব্লগ বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। যেমনঃ ব্যক্তিগত ব্লগ, ভিডিও ব্লগ, ছবি ব্লগ ইত্যাদি। ব্লগের বিষয়বস্তুর পরিধি বিবেচনায় একে আবার দুইভাগে ভাগ করা হয়।

  • ম্যাক্রোব্লগ
  • মাইক্রোব্লগ

ম্যাক্রোব্লগের বিষয়বস্তুর পরিধি ব্যাপক। এখানে অনেকগুলো টপিক নিয়ে লেখালেখি করা যেতে পারে। অন্যদিকে মাইক্রোব্লগিং এর বিষয়বস্তুর পরিধি তুলনামূলক ছোট। উদাহরণস্বরূপঃ অনলাইন ইনকাম নিয়ে তৈরি করা ব্লগ একটি ম্যাক্রোব্লগ। অপরদিকে শুধুমাত্র ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে তৈরি করা ব্লগ হলো একটি মাইক্রোব্লগ।

বুঝতেই পারছেন যে, অনলাইন ইনকাম নিয়ে তৈরি করা ব্লগে অনেকগুলো বিষয় রয়েছে। যেমনঃ ফ্রিল্যান্সিং, ইউটিউবিং, ব্লগিং, লেখালেখি ইত্যাদি। তবে এর শুধুমাত্র একটি বিষয় নিয়ে অর্থাৎ ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে যখন একটি ব্লগ তৈরি করা হবে তখন কিন্তু এখানে আগের মতো অনেকগুলো বিষয় থাকবে না।

আপনি কোন ধরনের ব্লগ তৈরি করবেন সেটা একান্তই আপনার ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যাপার।

ব্লগার কি অথবা ব্লগার কারা?

ব্লগার শব্দটি দ্বারা দুইটি জিনিস বোঝানো হয়ে থাকে। একটি হলো ব্লগার ডট কম। যেখানে ওয়েবসাইট তৈরি করে আর্টিকেল পাবলিশ করা যায়। অর্থাৎ এটি একটি সিএমএস (কন্টেন্ট ম্যানাজমেন্ট সিস্টেম)।

আরেকটি হলো, যারা ব্লগ পোস্ট করেন তাদেরকে ব্লগার বলা হয়। ব্লগাররা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয়ে ব্লগ পোস্ট করে থাকেন।

একটি ওয়েবসাইট ও একটি ব্লগের মধ্যে পার্থক্য হলো ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট অনিয়মিতভাবে আপডেট হতে পারে কিন্তু ব্লগে নিয়মিতভাবে কন্টেন্ট আপডেট করতে হয়। প্রতিনিয়ত এখানে কন্টেন্ট পাবলিশ হয়ে থাকে।

ব্লগিং করে কিভাবে অনলাইন ইনকাম করা যায়?

ব্লগিং করার মূল উদ্দেশ্যই থাকে টাকা ইনকাম করা। ব্লগিং করে অনলাইন থেকে টাকা ইনকামের জন্য বেশিরভাগ মানুষই এডসেন্স এর মাধ্যমে নিজের ব্লগকে মনিটাইজ করে থাকে।

এডসেন্স এর মাধ্যমে একজন ব্লগার নিজের ব্লগে এডস দেখাতে পারে। আর ভিজিটররা যখন এই এডস এ ক্লিক করে তখন ব্লগারের এডসেন্স একাউন্টে ডলার জমা হতে থাকে।

এডস দেখানোর জন্য যে শুধুমাত্র এডসেন্স ব্যবহার করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। ইজোয়িক বা আরো অনেক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা যেতে পারে।

এডস দেখানো ছাড়াও একটি ব্লগ থেকে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে ইনকাম করা যেতে পারে। এরজন্য এফিলিয়েট মার্কেটিং কি এবং কিভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং করে অনলাইনে টাকা আয় করতে হয় সে বিষয়ে জানতে হবে।

ব্লগিং শুরু করার ধাপসমূহ

ব্লগিং করার জন্য অবশ্যই কিছু ধাপ অবলম্বন করতে হবে। এই পর্যায়ে ব্লগিং শুরু করার ধাপ সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হবে।

ধাপ ১: বিষয়বস্তু নির্ধারণ

ব্লগিং শুরু করার প্রথম ধাপ হচ্ছে বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা। আপনি কোন বিষয়ে আপনার ব্লগ চালাতে চান সেটি নির্ধারণ করতে হবে। এর জন্য আপনি কীওয়ার্ড রিসার্চও করতে পারেন।

ধাপ ২: ইউনিক ডোমেইন নাম নির্বাচন 

আপনাকে একটি ইউনিক ডোমেইন নাম নির্বাচন করতে হবে। ডোমেইন নাম হচ্ছে আপনার ব্লগের এডরেস যেমনঃ choturbangla.com এটি আমাদের ব্লগের এডরেস তথা ডোমেইন নাম।

ডোমেইন নাম নির্বাচনে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। এমনটা যেনো না হয় যে, আপনার ডোমেইন নাম ব্লগের বিষয়বস্তুর সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

ধাপ ৩: ব্লগের জন্য হোস্টিং ক্রয়

আপনি আপনার ব্লগে যেহেতু নিয়মিত কন্টেন্ট পাবলিশ করবেন সেহেতু এই কন্টেন্ট গুলো ইন্টারনেট থেকে একসেস করার জন্য এগুলো হোস্টিং এ রাখা হয়ে থাকে। সেজন্য আপনাকে হোস্টিং ক্রয় করতে হবে।

তবে আপনি যদি ব্লগার সিএমএস ব্যবহার করে থাকেন। তবে হোস্টিং ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন হয়না। কারণ এখানে আপনাকে ফ্রিতেই হোস্টিং দিয়ে দেওয়া হয়।

ধাপ ৪: ব্লগ সুন্দরভাবে ডিজাইন

উপরের ৩ টি ধাপ সম্পন্ন করার পরে এবার আপনাকে আপনার ব্লগটিকে সুন্দরভাবে ডিজাইন করতে হবে। অনেক টেম্পলেট বা থিম রয়েছে যেগুলো নিজের ব্লগে আপলাই করে নিজের মতো করে কাস্টোমাইজ করে নিতে হয়।

এই কাজগুলো যদি আপনি করতে না চান তবে আপনি একজন ডেভেলপার কে হায়ার করতে পারেন। অথবা চতুরবাংলা যোগাযোগ পেইজ এ মেসেজ করতে পারেন। আমরা সল্পমূল্যে আপনার ব্লগ ডিজাইন করে দিবো।

ধাপ ৫: কন্টেন্ট বা আর্টিকেল পাবলিশ করা

এবার আপনাকে আপনার ব্লগে নিয়মিত কন্টেন্ট বা ব্লগ পাবলিশ করতে হবে। এবং ভালোভাবে এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন করতে হবে। এসইও না করলে আপনার ব্লগে অর্গানিক ভিজিটর আসবে না। তাই এটি অনেক বেশি গুরত্বপূর্ণ।

ধাপ ৬: কিছু কন্টেন্ট পাবলিশ করার পর ব্লগ মনিটাইজ করা

ব্লগে কিছু কন্টেন্ট পাবলিশ করার পরে আপনাকে এটি মনিটাইজ করতে হবে। হতে পারে সেটা এডসেন্স বা এর মতো কোনো এড নেটওয়ার্ক। আবার এফিলিয়েট ব্লগ হলে সেখানে এফিলিয়েট লিংক বসানোর মাধ্যমে আপনার ব্লগকে মনিটাইজ করে নিতে হবে।

উপরের এই ছয়টি ধাপ অনুসরণ করার মাধ্যমে আপনি ব্লগিং শুরু করে দিতে পারেন। ব্লগিং এ কিন্তু আরো অনেক বিষয় আছে যেগুলো জানতে হয় শিখতে হয়। সেগুলো প্র‍্যাকটিকালি কাজ করার মাধ্যমে শিখে ফেলতে হবে।

পরিশেষে

আপনার প্রথম ব্লগে হয়তো আপনি সফল নাও হতে পারেন। তবে এই ব্যর্থতায় থেমে থাকা যাবে না। ব্লগিং এর মাধ্যমে অনেক টাকা ইনকাম করা সম্ভব তবে এর জন্য প্রয়োজন দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা।

আপনার প্রথম ব্লগে যে আপনি সফল হবেন এমন কোনো কথা নাই। অনেকেই সফল হয় ইনকাম করে আবার অনেকে প্রথম ব্লগে লস করে। সেক্ষেত্রে আপনাকে ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুনভাবে শুরু করতে হবে।

ব্লগিং মোটেও কঠিন কোনো বিষয় নয়। আপনি চেষ্টা করলেই ব্লগিং থেকে মাসে ভালো পরিমাণ টাকা অনলাইন থেকে ইনকাম করতে পারবেন। এবং অনেকে সেটা করছেও। তাই নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করে যান। নিয়মিত কন্টেন্ট আপলোড করতে থাকুন। কন্টেন্ট দিতে দিতে থেমে গেলে হবে না। তাহলেই দেখবেন কিছু সময় পর আপনার ব্লগ থেকে ভালো পরিমাণ টাকা আয় হচ্ছে। ধন্যবাদ!


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url