টক দই বানানোর রেসিপি

টক দই এমন একটি খাবার যা আমাদের সকলেরই অত্যধিক পরিচিত। এই খাবার টি আমরা খুব সহজেই বাসায় বসে বানিয়ে নিতে পারি। টকদই নানান গুণে গুণান্বিত একটি খাবার, টক দইয়ের পুষ্টি গুণের কথা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। 

টক দই বানানোর রেসিপি

পুষ্টির পাশাপাশি টক দই কিন্তু সুস্বাদু এবং মজাদার একটি খাবার। আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা মিষ্টি দই খেতে পছন্দ না করলেএ টক দই খেতে খুবই পছন্দ করেন। শারীরিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে টক দই এর উপকারিতা অনেক বেশি।

এতে রয়েছে অধিক পরিমানের ভিটামিন B2, ভিটামিন B12, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। এসব ছাড়াও টক দই এ রয়েছে ক্যালসিয়াম যা আমাদের হাড় মজবুত করতে অধিক সহায়ক।

পাশাপাশি ভিটামিন ডি আমাদের ত্বক, দাত, চুল ভালো রাখে। প্রতিদিন টক দই খেলে বিভিন্ন ধরনের জটিল, কঠিন রোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। দৈনন্দিন জীবনের হরেক রকম রান্নায় প্রতিনিয়ত আমরা টক দই ব্যবহার করছি। 

রুপচর্চা হোক বা ডায়েটের ক্ষেত্রে, সকল ক্ষেত্রেই টক দই জরুরী। আপনি চাইলে খুব সহজেই বাসায় বসেই মজাদার, পুষ্টিকর টক দই তৈরী করে ফেলতে পারেন। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেই টক দই বানানোর রেসিপি..

আজকের আর্টিকেল এ আমরা কয়েকটি আলাদা আলাদা পদ্ধতিতে টক দই বানানোর রেসিপি জানবো-

১. গরুর দুধের সাহায্যে টক দই বানানোর রেসিপি। 

২. গুড়া দুধের সাহায্যে টক দই বানানোর রেসিপি।

৩. রুপচর্চা এবং ডায়েট এর জন্য অল্প সময়ে টক দই বানানোর রেসিপি।

৪. ভিনেগার এর সাহায্যে মাত্র দশ মিনিটে টক দই বানানোর রেসিপি।

৫. তেতুল এর সাহায্যে টক দই বানানোর রেসিপি।

গরুর দুধের সাহায্যে টক দই বানানোর রেসিপিঃ

প্র‍য়োজনীয় উপকরণঃ

১. গরুর দুধ - ১ লিটার (পরিমাণ অনুযায়ী দুধ এর পরিমান বাড়াতে পারেন) 

২. টক এর বিজ

প্রস্তুত প্রনালীঃ

সবার প্রথমে একটি বড় পাত্র নিয়ে নিন। তারপর তাতে টাটকা গরুর দুধ ঢেলে নিতে হবে। গ্যাস জ্বালিয়ে দিয়ে সাবধানে পাত্রটি চুলায় বসিয়ে দিতে হবে। প্রথম দিকে গ্যাসের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে দুধ জ্বাল দিয়ে নিতে হবে। 

কিছু সময় পর চুলার আঁচ কমিয়ে দিয়ে জ্বাল দিতে থাকবেন এবং অনবরত নেড়ে নেড়ে দুধ জ্বাল দিবেন। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেনো দুধ পাত্রের তলানি তে লেগে না যায়। দুধ জ্বাল দিতে দিতে ঘন করে নিতে হবে। 

অবশ্যই যতো পরিমানে দুধ নেবেন জ্বাল দিয়ে দিয়ে তার অর্ধেক করে নিবেন। অর্থাৎ যদি এক লিটার দুধ নেন তাহলে সেটাকে জ্বাল দিতে দিতে কমিয়ে আধা লিটার করে ফেলতে হবে, একইভাবে যদি দুই লিটার নেন তাহলে কমিয়ে এক লিটার করবেন। 

দুধ ঘন হয়ে গেলে গ্যাস বন্ধ করে দিতে হবে এবং পাত্রটি কে সাবধানে চুলা থেকে নামিয়ে নিতে হবে। এখন দুধ গুলোকে হালকা ঠান্ডা হওয়ার জন্য বাতাসের মধ্যে রেখে দিন। যখন দেখবেন দুধ ঠান্ডা হয়ে আসছে, হালকা হালকা গরম আছে তখনই দুধ এর মধ্যে টক এর বিজ মিশিয়ে নিতে হবে।

একটি চামচ দিয়ে নেড়ে নেড়ে টক এর বিজ মিশিয়ে নেবেন। এখন যেই পাত্রে টক দই বানাবেন দুধ গুলোকে সেই পাত্রে ভালো ভাবে ঢেলে নেবেন। এবার পাত্র টিকে একটি ভারী কাপড় অথবা কম্বলের ভেতর এ রেখে দিতে হবে।

সারা রাত ধরে এভাবেই পাত্র টিকে রেখে দিবেন। সকালে সাবধানে পাত্র টিকে নামিয়ে নেবেন এবং পেয়ে যাবেন একদম পারফেক্ট আর মজাদার টক দই। তবে আপনার যদি মনে হয় টকদই বেশি পাতলা হয়ে গিয়েছে। 

আরও কিছু পরিমানে ঘন করতে চান তাহলে রেফ্রিজারেটর এ রেখে দিতে পারেন। এর ফলে টকদই খুব সহজেই আপনার পছন্দ অনুযায়ী ঘন হয়ে যাবে। ব্যস তৈরি হয়ে গেল গরুর দুধের সাহায্যে টক দই বানানোর রেসিপি। 

গুড়া দুধের সাহায্যে টক দই বানানোর রেসিপিঃ

প্র‍য়োজনীয় উপকরণঃ

১. গুড়া দুধ - এক কাপ

২. কুসুম গরম পানি - দের কাপ

৩. আগে থেকে তৈরী করা টক দই - ৩ চা চামচ

প্রস্তুত প্রনালীঃ

গুড়া দুধের সাহায্যে কিন্তু আপনি চাইলেই খুব সহজেই টক দই বানিয়ে ফেলতে পারেন। এর জন্য প্রথমেই একটি বাটিতে এক কাপ গুড়া দুধ নিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই কাপের পরিমান অনুযায়ী দেড় কাপ পানি নিয়ে নেবেন।

অবশ্যই হালকা গরম পানি দিয়ে দুধ মেশাবেন। খেয়াল রাখবেন যেনো পানি কুসুম গরম হয়। পানির তাপমাত্রা যেনো এমন থাকে আপনি অনায়সে পনেরো থেকে বিশ সেকেন্ড পানিতে আঙুল ডুবিয়ে রাখতে পারছেন। 

এখন একটি চামচ এর সাহায্যে গুড়া দুধ এবং গরম পানি নেড়ে নেড়ে মিশিয়ে নিবেন। যখন দেখবেন এই উপাদান গুলো ভালো ভাবে মিশে গিয়েছে ঠিক তখনই আগে থেকে তৈরী থাকা টক দই মিশিয়ে দিবেন।

আবার চামচের সাহায্যে ভালোভাবে নেড়ে নেড়ে টকদই, দুধ এবং গরম পানি মিশিয়ে নেবেন। খেয়াল রাখবেন যেনো কোনো দানা না থাকে। এখন একটি মাটির পাত্র নিয়ে নিবেন অথবা যেই পাত্রে টক দই বানাবেন সেই পাত্রটি নিয়ে নিবেন।

মিশ্রণটি পাত্রে ভালোভাবে ঢেলে দেবেন। চেষ্টা করবেন টক দই মাটির পাত্রে বানানোর জন্য তাহলে দই থেকে যেই অতিরিক্ত পানি ওঠে থাকে সেটা মাটির পাত্রটি শুষে নিয়ে নিবে। এবং এতে দই টি বেশি পানসে হবে না, খেতেও মজাদার হবে।

এখন একটি কম্বল অথবা ভাড়ি কাপড় নিয়ে নিতে হবে। পাত্রটিকে ভালো ভাবে সাবধানে এর মধ্যে রেখে দিবেন সারা রাতের জন্য। সকালে উঠেই দেখতে পাবেন সুস্বাদু,  পারফেক্ট টক দই।

দই টি আরও মজাদার বানাতে তিন থেকে চার ঘন্টার জন্য রেফ্রিজারেটর এ রেখে দিতে পারেন। মাঝে মাঝে দই বানানোর অনেক তাড়া থাকে তখন যদি সারারাত দই বানানোর জন্য সময় না থাকে তাহলেও কিন্তু অনেক কম সময়ে আপনি বানাতে পারবেন।

তখন চুলার গরমে রেখে পাত্রটিকে ঢেকে দিয়ে, ভালো ভাবে মোটা কাপড় দিয়ে জড়িয়ে রেখে দই বানিয়ে নিতে হবে। তখন কিন্তু মাত্র এক থেকে দুই ঘন্টার মধ্যেই পারফেক্ট টক দই বানানো হয়ে যাবে।

রুপচর্চা এবং ডায়েট এর জন্য অল্প সময়ে টক দই বানানোর রেসিপিঃ

প্র‍য়োজনীয় উপকরণঃ

১. দুধ - ১ লিটার (পরিমাণ অনুযায়ী দুধ এর পরিমান বাড়াতে পারেন)

২. লেবুর রস - একটি বড় সাইজের লেবুর রস করে নিতে হবে

প্রস্তুত প্রনালীঃ

রুপচর্চা এবং ডায়েটে যুগ যুগ ধরে টক দই ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রথমেই একটি পাত্রে গরুর দুধ নিয়ে নিতে হবে। গরুর দুধ গুলো কে ভালো ভাবে জ্বাল দিয়ে কমিয়ে নিতে হবে।

যখন দেখবেন পরিমান মতো হয়ে গিয়েছে তখন গ্যাস বন্ধ করে নামিয়ে নিবেন। তারপর দুধ ভালো ভাবে ঠান্ডা করে নিতে হবে। ঠান্ডা হয়ে গেলে দুধের উপরে সর ভেসে উঠবে সেটা তুলে রাখতে হবে।

যেহেতু এই টক দই ডায়েটে ইউজ করা হবে তাই অবশ্যই ফ্যাট কম থাকতে হবে। যখন দেখবেন দুধ একদম ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে তখন লেবুর রস ঢেলে দিতে হবে। এখন একটি চামচের সাহায্যে নেড়ে নেড়ে টক দই বানাতে হবে।

তবে খেয়াল রাখবেন যেনো তাড়াহুড়ো না করা হয়৷ কয়েক সেকেন্ড নেড়ে একটু থামবেন তারপর আবারও কয়েক সেকেন্ড এর জন্য নাড়তে থাকবেন। এভাবে নাড়তে নাড়তে দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যেই দই তৈরী হয়ে যাবে।

দেখলেন তো কতো কম সময়ে টক দই বানানোর রেসিপি তৈরী হয়ে গেলো।

ভিনেগার এর সাহায্যে মাত্র দশ মিনিটে টক দই বানানোর রেসিপিঃ

প্র‍য়োজনীয় উপকরণঃ

১. দুধ - ১ কেজি ( টক দই বানানোর রেসিপিটি চাইলে পাউডার দুধ দিয়ে ও তৈরী করতে পারেন,  তাহলে আগেই গরম পানি দিয়ে লিকুইড করে নিবেন)

২. ভিনেগার - দুই থেকে তিন চামচ

প্রস্তুত প্রনালীঃ

প্রথমে সিলেক্ট করে নিন কোন দুধের মাধ্যমে টক দই তৈরী করবেন। পাউডার দুধ অথবা গরুর দুধ  যে কোনো এক টাই আপনি চাইলে ব্যবহার করতে পারেন। দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করে নিতে হবে।

ঘন হয়ে আসলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা হতে দিন। খেয়াল রাখবেন যেনো দুধ একেবারে ঠান্ডা না হয়ে যায়৷ হালকা কুসুম গরম থাকতেই দুধের মধ্যে ভিনেগার ঢেলে দিন। ভিনেগার সম্পুর্ন ঢালা হয়ে গেলে একটি চামচের সাহায্যে ভালো ভাবে নেড়ে নেড়ে মিশিয়ে নিতে হবে।

আস্তে আস্তে দেখবেন দুধ জমাট বেধে দই হতে শুরু করেছে। এখন একটি ঢাকনার সাহায্যে পাত্র টি ঢেকে দিবেন তারপর অপেক্ষা করবেন। কুসুম গরম দুধ গুলো সম্পুর্ন ভাবে ঠান্ডা হয়ে যেতে যেতেই কিন্তু দেখবেন আপনার টক দই বানানোর রেসিপি তৈরী হয়ে গিয়েছে।

এভাবেই আপনি চাইলে একদমই কোনো ঝামেলা ছাড়াই মাত্র দশ মিনিট এর মধ্যেই টক দই তৈরী করে ফেলতে পারেন।

তেতুল এর সাহায্যে টক দই বানানোর রেসিপিঃ

প্র‍য়োজনীয় উপকরণঃ

১. দুধ -  ১ লিটার

২. তেতুল অথবা তেতুলের রস - চার থেকে পাচ ফোটা

প্রস্তুত প্রনালীঃ

টক দই বানানোর রেসিপি তে রয়েছে হরেক রকমের পদ্ধতি। এর মধ্যে তেতুল এর সাহায্যে টক দই বানানোর রেসিপি টি কিন্তু অনেকেরই অজানা। এই পদ্ধতি তে ও খুব সহজেই টক দই বানানো যায়।

এই পদ্ধতির মাধ্যমে টক দই বানাতে সবার প্রথমে একটি বড় পাত্র নিয়ে নিন। পাত্র টি তে দুধ ঢেলে নিয়ে জ্বাল দিয়ে সঠিক পরিমানে শুকিয়ে নিন।

জ্বাল দেওয়া হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে নিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে। মোটামুটি ঠান্ডা হয়ে গেলে তেতুলের রস ঢেলে দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। একটি চামচের সাহায্যে  ভালো ভাবে নেড়ে চেড়ে মিশিয়ে নিতে হবে।

এবার পাত্র টিকে একটি ভারী কাপড় অথবা কম্বলের ভেতর এ  পেচিয়ে রেখে দিতে হবে। সাত থেকে আট ঘন্টা ধরে এভাবেই পাত্র টিকে রেখে দিবেন। নির্দিষ্ট সময় পরে সাবধানে পাত্র টিকে নামিয়ে নেবেন এবং পেয়ে যাবেন একদম পারফেক্ট আর মজাদার টক দই।

তবে আপনার যদি মনে হয় টকদই বেশি পাতলা হয়ে গিয়েছে। আরও কিছু পরিমানে ঘন করতে চান তাহলে রেফ্রিজারেটর এ রেখে দিতে পারেন।

উপরোক্ত সকল পদ্ধতির মাধ্যমে আপনি যেকোনো একটি পদ্ধতি অবলম্বন করে আজই চেষ্টা করুন টক দই বানানোর। আমরা আশা করছি, আমাদের আজকের টক দই বানানোর রেসিপি আপনাদের ভালো লেগেছে।

আপনারা ঘরে বসেই  মজাদার টক দই উপভোগ করতে পারবেন। তাহলে আর দেরি কেনো, মজাদার টক দই বানিয়ে আপনার প্রিয়জনদের অবাক করে দিতে পারেন।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url