অরিজিনাল হেডফোন চেনার উপায়

পিসিতে একান্তে গান শোনার জন্য বা নির্বিঘ্নে গেইম খেলার জন্য হেডফোনের জুড়ি নেই। আবার কিছু কিছু অফিস জবের জন্যও হেডফোন খুবই দরকারি একটি যন্ত্র। গ্যাজেট বাজারে প্রচুর হেডফোন কিনতে পাবেন, কিন্তু এর মধ্যে কোনটা আসল কোনটা আসল সেটা কি ধরতে পারবেন?  

অরিজিনাল হেডফোন চেনার উপায়

অরিজিনাল হেডফোন চেনার উপায় যদি আপনার জানা থাকে, তাহলে হেডফোন কিনে আপনাকে ঠকতে হবেনা। ঠিক কোন কোন বিষয়গুলো আসল এবং নকল হেডফোনের পার্থক্য স্পষ্ট করে তোলে, আজকের আর্টিকেলে থাকছে সেসব নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা। 

১. অবিশ্বাস্য কম দাম 

আসল হেডফোন চেনার প্রথম উপায় হচ্ছে এর দাম। অরিজিনাল প্রোডাক্টটির দাম কয়েক হাজার টাকা হতে পারে। কিন্তু ফেইক প্রোডাক্টটি পাবেন খুবই কম দামে, যা একদমই অবিশ্বাস্য। 

২. কেনাবেচার স্থান 

অরিজিনাল হেডফোন কেনার আসল জায়গা হচ্ছে ট্রাস্টেড ওয়েবসাইট বা অথোরাইজড শপ। কিন্তু রেপ্লিকা কিনতে পাওয়া যাবে গ্যাজেটের পাইকারি দোকানগুলোতে বা ফুটপাতে। 

৩. ত্রুটিপূর্ণ প্যাকেজিং 

হেডফোনের বক্সের প্যাকেজিং থেকেও আসল-নকল চেনা যায়৷ সাধারণত হেডফোনের বক্স প্লাস্টিক পেপার দিয়ে র‌্যাপ করা থাকে। আসল হেডফোনের বক্সের গায়ে প্লাস্টিক র‌্যাপিংটা শক্ত এবং একদম মসৃণভাবে এঁটে থাকে। কিন্তু নকল হেডফোনের বক্সের এই র‌্যাপিংটা থাকে ঢিলেঢালাভাবে। আবার র‌্যাপিংয়ের নিচে ছোট ছোট বাবলও দেখা যেতে পারে। আরেকটা উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে রং এবং সাইজ। আসল এবং নকল হেডফোনের বক্সের রঙে পার্থক্য থাকে। 

আবার আসল হেডফোনের বক্স এবং নকল হেডফোনের বক্সের আয়তনে সামান্য অমিল থাকবে। অরিজিনাল এবং ফেইক হেডফোনের বক্স দু'টি যদি জোগাড় করতে পারেন তাহলে সেগুলো পাশাপাশি রেখে নিজেই পার্থক্যটা টের পাবেন।

৪. প্রোডাক্ট ডিটেইলসে পার্থক্য 

অরিজিনাল হেডফোনের বক্সের গায়ে প্রোডাক্ট সম্পর্কিত ফিচারস এবং স্পেসিফিকেশনস ডিটেইলে লেখা থাকে। কিন্তু ফেইক বা রেপ্লিকা হেডফোনের বক্সে এসব তথ্য একটু কম লেখা থাকবে।

৫. হেডফোনের রং

বক্সের মতো হেডফোনের রঙেও পার্থক্য থাকবে যদি আপনি নকল হেডফোন কেনেন। আসল হেডফোনের রং যদি গাঢ় হয়, তাহলে নকল হেডফোনের রং হালকা হবে। এমনকি নকল হেডফোনের সাথে সাথে এর ইউজার ম্যানুয়াল ও এক্সেসরিজের রঙও হালকা হবে আসলটার চাইতে। 

৬. হেডফোনের এক্সেসরিজ 

আগেই বলেছি নকল হেডফোনের এক্সেসরিজের রং আসলটার চাইতে হালকা হবে। সেই সাথে এগুলোর ডিজাইনেও কিছুটা পার্থক্য দেখতে পাবেন। 

৭. হেডফোনের নাম  

অথেনটিক হেডফোনের ব্র্যান্ড নেইম যতটা সুন্দর ও নির্ভুলভাবে ডিজাইন করা থাকে, নকল হেডফোনের ব্র্যান্ড নেইম সেরকম সুন্দর থাকবেনা। আসল হেডফোনের গায়ে ব্র্যান্ড নেইম এমনভাবে লেখা থাকে যা বছরের পর বছর ব্যবহারেও নষ্ট হয়না। কিন্তু নকল হেডফোনের ক্ষেত্রে সেটা মুছে যাবে অল্প কয়েকদিনেই। 

৮. হেডফোনের অ্যাঙ্গেল 

অরিজিনাল হেডফোন যেকোন অ্যাঙ্গেলে অনায়াসে ঘোরানো যাবে, কিন্তু রেপ্লিকা হেডফোন এতটা ফ্লেক্সিবল থাকবেনা। 

৯. হেডফোনের ফোম 

আপনার কেনা বা পছন্দ করা হেডফোনটা আসল না নকল সেটা বুঝতে এর ফোমের প্যাডিংগুলো চেক করে দেখুন। আসল প্রোডাক্টের ফোমের  কোয়ালিটি যেমন ভালো থাকবে, তেমনি এর প্যাডিংটা শক্তভাবে এঁটে থাকবে। কিন্তু নকল প্রোডাক্টের ফোমের কোয়ালিটি ভালো থাকবেনা। নতুন অবস্থাতেই প্যাডিংটা লুজ লাগবে, আর অল্প কয়েকদিনে সেটা আলগা হয়ে যাবে। 

১০. হেডফোনের ক্যাবল

অথেনটিক হেডফোনের ক্যাবল খুব বেশি মোটা থাকেনা এবং এর বাটনগুলো ব্যবহার আরামদায়ক হয়। আবার ক্যাবলের ভিতরে ইনলাইন রিমোট নামে একটি জিনিস থাকে যা সহজে নড়েনা। কিন্তু নকল হেডফোনের ক্যাবলটা বেশ মোটা হয়, বাটনগুলো সহজে কাজ করেনা, এবং ইনলাইন রিমোটটি ক্যাবল ধরে ঝাঁকুনি দিলে নড়ে উঠে। কিছু কিছু ব্র্যান্ডের হেডফোন ক্যাবলের ইনলাইন রিমোটে মোটা রাবার কোটিং দেয়া থাকে যাতে লিকুইড জিনিস 

রিমোটের ভিতরে ঢুকতে না পারে৷ এই রাবার কোটিং থাকার ফলে বাটন প্রেস করা একটু কঠিন হয়ে যায়৷ কিন্তু নকল হেডফোন ক্যাবলের রিমোটে এই কোটিং থাকেনা, তাই বাটন প্রেস করা যায় সহজে।  

১১. নিম্নমানের কেসিং এবং জয়েন্ট

ফোমের প্যাডিংয়ের মতো নকল হেডফোনের কেসিংও থাকবে ত্রুটিপূর্ণ। নকল হেডফোনের ইয়ারকাপের কেসিং বানানো হয় নিম্নমানের প্লাস্টিক দিয়ে। আবার হেডফোনের জয়েন্টগুলো যদি আলাদা করেন তাহলে দেখতে পাবেন এর ভিতরের ফিনিশিংটা ভালো না এবং বাড়তি প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়েছে। 

নকল হেডফোনের কেসিং থেকে ব্যাটারি সহজে বের করা যায় না যেটা আসল হেডফোনের কেসিং থেকে করা সম্ভব। অরিজিনাল হেডফোনের কেসিংয়ের ম্যাটেরিয়াল এবং জয়েন্টের ফিনিশিং দুটোই বেশ ভালোমানের হয়।

১২. প্রোটেক্টিভ পাউচ 

আসল হেডফোনের প্রোটেক্টিভ পাউচ ভালো কোয়ালিটির কাপড় দিয়ে বানানো থাকে যা হাতে ধরলে বুঝতে পারবেন। নকল হেডফোনের পাউচের কাপড়টা খারাপ থাকে। ওজন ও আয়তনের দিক থেকে অরিজিনাল হেডফোনের পাউচটা তুলনামূলকভাবে ভারি এবং বড় হবে। 

এছাড়াও আসল এবং নকল হেডফোনের পাউচ, পাউচের জিপার, এবং  ক্যারাবাইনার হুকের (যদি থাকে) রং ভিন্ন হয়। আসল হেডফোনের ক্যারাবাইনার হুকে ব্র্যান্ডের লোগো থাকবে কিন্তু নকল হেডফোনের ক্যারাবাইনার হুকে সেটা পাবেন না। 

১৩. সাউন্ড কোয়ালিটি 

এতক্ষণ জানতে পেরেছেন বাইরে থেকে অাসল হেডফোন চেনার উপায়গুলো সম্পর্কে, এবারে কথা বলব সাউন্ড কোয়ালিটি সম্পর্কে। স্বাভাবিকভাবেই নকল হেডফোনের সাউন্ড কোয়ালিটি কখনোই আসল হেডফোনের মতো পারফেক্ট হবেনা। রেপ্লিকা হেডফোনের বেস রেট অনেক বেশি থাকবে, ফলে সাউন্ড একটু লাউড, ডার্ক, আর অসঙ্গতিপূর্ণ শোনাবে। অথেনটিক হেডফোনের বেস রেট এবং সাউন্ড কোয়ালিটি সবসময় ব্যালেন্সড থাকে। আসল অ্যাক্টিভ নয়েজ ক্যান্সেলেশন বা এএনসি হেডফোনগুলো খুব সূক্ষ্মভাবে ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ ক্যান্সেল করে। 

কিন্তু নকল এএনসি হেডফোনের নয়েজ ক্যান্সেলেশন আসলটার মতো সূক্ষ্ম হবেনা। আবার অরিজিনাল হেডফোন দিয়ে হাই ভলিউমে গান শুনলে সাউন্ড লিক হয়, অর্থাৎ আশেপাশের মানুষ শুনতে পাবে আপনি কি শুনছেন। কিন্তু রেপ্লিকা হেডফোনে সেভাবে সাউন্ড লিক হয়না। 

শেষ কথা 

আশা করি অরিজিনাল হেডফোন চেনার উপায় গুলো জানার পরে আপনার হেডফোন কিনতে কোনপ্রকার অসুবিধা হবেনা। পরবর্তীতে হেডফোন কিনতে গেলে খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবেন কোনটা আসল এবং কোনটা নকল। যদিও আসল প্রোডাক্টের দাম একটু বেশি, তবুও ব্যবহার করবেন যখন ভালো জিনিসই ব্যবহার করুন। লেখাটি কেমন হয়েছে সেটা জানাতে কিন্তু ভুলবেন না। আমরা আপনার মূল্যবান মতামতের অপেক্ষায় আছি, ধন্যবাদ। 



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url